পরিবহন মন্ত্রীর হাতে উদ্ধোধনের পরেও দুকোটি টাকা বরাদ্দে নির্মিত সরকারি বাস ডিপোতে ঝুলছে তালা। সব পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও আজও চালু হলনা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার মালদহের চাঁচলের কলিগ্রাম ডিপো।
ঝাঁ-চকচকে তালাবন্ধ ডিপো এখন অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়া হয়ে উঠেছে। এই অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পাশাপাশি ওই ডিপো চালুর দাবিতে সরব হয়েছেন তারা। আর এই ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
উল্লেখ্য, মাস ছয়েক আগে চাঁচলের কলিগ্রামে এসেছিলেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। নারকেল ফাটিয়ে, বাস চালিয়ে তিনি উদ্বোধন করেছিলেন কলিগ্রামে নবনির্মিত বাস ডিপোর। জানিয়েছিলেন, পরদিন থেকেই এই ডিপো থেকে সরকারি বাস যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ডিপো চালু না হওয়ায় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন কলিগ্রাম, খরবা, মতিহারপুর সহ অন্যান্য এলাকার মানুষজন। প্রতিদিন বহুযাত্রী বাক্স প্যাঁটরা নিয়ে বাস ধরতে আসলেও নজরে আসছে সদর দরজায় তালা ঝুলা।
কলিগ্রামের নতুন ডিপোটিতে যাবতীয় পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। রয়েছে যাত্রীদের যাবতীয় স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা, রয়েছে ডিপো, ওয়ার্কশপ, এমনকি উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার জ্বালানি তেলের পাম্প এবং যাত্রীনিবাস। মন্ত্রী ডিপোর উদ্বোধন করে কলকাতা ফিরে গিয়েছেন। তারপরেই তালা পড়েছে অন্তত দু’কোটি টাকায় নির্মিত সেই বাস ডিপোতে বলে অভিযোগ। অবিলম্বে কলিগ্রাম ডিপো চালু করার দাবিতে বিক্ষোভে সামিল হলেন এলাকাবাসী। মঙ্গলবার দুপুরে নবনির্মিত বাস ডিপোর মূল ফটকের সামনে ফেস্টুন হাতে নিয়ে তুমুল বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা।
বিক্ষোভকারী সুভাষ কৃষ্ণ গোস্বামী অভিযোগ করে বলেন, ছমাস আগে মন্ত্রী ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্ধোধন করে গিয়েছিলেন দুকোটির বাস ডিপোর। কিন্তু তারপরেই নেমে আসলো অন্ধকার। দু একদিন চালুর পর বন্ধ হয়ে গেল ডিপোটি। বন্ধ হওয়ার ফলে ঠিকাদারদের দখলে যাচ্ছে ডিপো। সেই এলাকাটি ফাঁকা থাকায় বসছে অসামাজিক কাজের আসর বলে অভিযোগ। তার দাবি অবিলম্বে ডিপো চালু করা হোক।
কলিগ্রাম ডিপোতে বাস ধরতে আসা এক যাত্রী প্রকাশ দাস জানালেন, এসেছিলাম বাস ধরতে, কিন্তু বাস ডিপোতে তালা মারা। এখন ফের চাঁচলে যেতে হবে।
যাত্রীদের জন্য এই বাসডিপোটি চালু করা হলে হয়রানি কমবে। এখন দিনে মাত্র দু’একটি বাস অনিয়মিতভাবে এখানে আসে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। উদ্ধোধনের পরেও কেন চালু হলনা বাস ডিপো? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চাঁচল বাস ডিপোতে গেলে উত্তর থাকলো অধরা। সংবাদমাধ্যমকে প্রতিক্রিয়া না দিয়ে মুখে কুলুপ এটেছেন ডিপোর আধিকারিক জগেশ চন্দ্র বর্মন।
আর এই ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে শাসক-বিরোধী তর্জা। বিজেপির মালদা জেলা যুব মোর্চার সহ সভাপতি সুমিত সরকার কটাক্ষ করে বলেন, সরকারি টাকা নয়ছয় করে রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। তারই উদাহরণ দুকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই কলিগ্রাম বাস ডিপো। মানুষের পরিসেবা দেওয়ার বদলে সেটি এখন খামারবাড়িতে পরিণত হয়েছে।
বিজেপির অভিযোগকে নস্যাৎ করে পাল্টা বক্তব্যে তৃণমূলের মালদা জেলা সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হোসেনের দাবি, সেখানে বাস যাচ্ছে, ডিপো চালু রয়েছে। যদিও পুরোপুরি ভাবে চালু হয়নি, সেটাও দ্রুত হবে। আমাদের সরকার মানুষের উন্নয়ন করে। বিজেপির উন্নয়ন সহ্য হয়না বলে ভুলভাল মন্তব্য করছে, এমনটাই দাবি তার।